Saturday 22 October 2022

কবিতা -- ফিরিয়ে দাও--সৌদামিনী শম্পা


কবিতা -- 

ফিরিয়ে দাও
সৌদামিনী শম্পা 

ছেড়ে এসেছি দিনগুলো অতীতের ছায়ামাখা পথে।
শান্ত শীতল দিন, ঝড়হীন, দোলাচলহীন,
বড় অমলীন সে দিনের স্নেহমাখা কোণ!

রোদ ছিল না তো, ছিল না তো হিসেবের খাতা।
বাল্য, কৈশোর, বড় মায়াময়!
মায়ের আঁচল ছিল, নির্ভার মন ও মনন!

কবে হবো বড় বাবার মতন, অথবা কোনো এক বিদগ্ধ ব্যক্তিত্ব্য।
প্রাপ্তির ভাঁড়ার হবে না জানি কত রত্নভারাক্রান্ত!
কিন্তু হায়! সব ভুল, ভাঁড়ারে বেড়েই চলে, বিনাশ স্থাপন!

ফিরে যদি দাও, তবে দিও মায়ের আঁচল !
ফিরে যদি দাও দিও বাবার ছায়া!
ফিরে যদি দাও, দিও নির্মল মন, ঠিক শিশুর মতন।

Tuesday 18 October 2022

গল্প --সপ্ন যখন সত্য হয়--সামিমা ইয়াসমিন



গল্প --

সপ্ন যখন সত্য হয়
সামিমা ইয়াসমিন 

গল্পটি শুরু হয় তানিয়া নামে একটি মেয়ের নেতৃত্ব দিয়ে যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি ভালো কলেজে পড়ে। আর এই কলেজে অনেক ধনী ঘরের ছেলেমেয়েরা পড়তে আসে। কিন্তু খুবই কম ছাত্র-ছাত্রী আছে যারা গরীব ঘরের তবে তারা স্কলারশিপ এর মাধ্যমে এই কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। আর তাদেরই মধ্যে তানিয়া হলো একজন।

তার বাবা একটি কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ করে এবং মা গৃহকর্ত্রী। পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে খুব কষ্টে তাদের পারিবারিক জীবন যাপন চলে। এমনকি তানিয়া নিজে একটি কেকের দোকানে কাজ করে যাতে করে তার পড়াশোনার খরচা তুলতে পারে এবং তাদের পারিবারিক আর্থিক সমস্যা দূর করতে পারে। তবুও তাদের এই দারিদ্রতা দূর হয় না। তার একটি ছোট ভাইও আছে, হামিদ। সে এখন ক্লাস টেনে পড়ে। তার ছোট থেকে একটা ইচ্ছা আছে যে সে বড় হয়ে একজন রিপোর্টার হবে । কিন্তু সে তার দিদির মত অতটা পড়াশোনাতে ভালো নয় তাই সে ভালো স্কুলে পড়ার সুযোগ পাইনি। কিন্তু তানিয়া ছোট থেকে মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে সে বড় হয়ে একজন লেখিকা হবে। আর ছোট থেকেই তার এই লেখার অভ্যাস টি তাকে আরও উদ্যোগী করে তুলেছে।  যখন সে একা কোথাও বসে থাকে তখন সে শুধু ভাবে আর তার মনের কথা কলমের দ্বারা খাতায় প্রকাশিত হয়।

উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর  কলেজে ভর্তি হয়েছিল কিন্তু তখন চারিদিকে করোনা ভাইরাসের মহামারী ছড়িয়ে পড়ার কারণে কয়েক মাস লকডাউন ছিল। সরকারের তরফ থেকে বাড়ির বাইরে বেরোনো নিষেধ ছিল তাই সে বছর পড়াশোনাটাও খুব ভালো হয়নি। কিন্তু অনলাইনে পরীক্ষা হওয়ার কারণে বেশিরভাগ সবাই পাস করে গেছে। তবে এখনো পর্যন্ত ফার্স্ট সেমিস্টারের রেজাল্ট বের হয়নি। আর সরকার থেকে রীতিমতো সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কারণে করোনা ভাইরাসের মহামারী আপতত দূর হয় এবং স্কুল-কলেজ সব খুলে দেয়। তারপর রীতিমতো পড়াশোনা শুরু হয় তানিয়াদের ও কলেজ খুলে দেয় এবং কলেজ থেকে একটা নোটিশ দেয় তাতে লেখা থাকে —
“ এতদ্বারা কলেজের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের জানানো হচ্ছে যে, বিগত দুবছর ধরে অতিমহামারীর সংকট কাটিয়ে মহাবিদ্যালয়ের নিয়মিত পঠন-পাঠন বর্তমানে অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ার পূর্বের ন্যায় বর্তমান ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে কলেজের বার্ষিক পত্রিকা ‘নবাঙকুর’ প্রকাশ করা সম্ভব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পত্রিকার জন্য সকলকে নিম্নলিখিত বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় লেখা জমা দেবার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

বাংলা ভাষায় লেখা যেকোনো ধরনের রচনায় আকাদেমি বানান বিধি অনুসরণ করতে হবে এবং লেখার শেষে নিজ স্বাক্ষর দিতে হবে। লেখার মধ্যে কোনরকম নকল থাকলে বা কারো লেখা হুবহু তুলে এনে জমা দেওয়া হবে যাবে না। কেবলমাত্র উপযুক্ত লেখাগুলি পত্রিকায় প্রকাশিত হবে। পত্রিকায় প্রকাশিত লেখা গুলির মধ্যে তিনটি বাছাই করা লেখার রচয়িতাদের পুরস্কার প্রদান করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। লেখা জমা দেবার শেষ তারিখ ১৫ ই এপ্রিল ২০২২। ”

তানিয়া এ ব্যাপারে খবর পাই যে কলেজে নোটিশ দিয়েছে কিন্তু কী নোটিশ দিয়েছে তা জানেনা। সে রোজকার মতো সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং ব্রেকফাস্ট করে কলেজের ইউনিফর্ম পড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তারপর সবার প্রথমে কেকের দোকানে গিয়ে তিন ঘন্টা দোকান সামলায়। তারপর কলেজ যায়। দোকানের মালিক তানিয়াকে তার নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসে। তাই তাদের মধ্যে সম্পর্কটি বেশ ভালোই আছে।


আজকে নোটিশ দেওয়ার খবর শুনে সে একটু তাড়াতাড়ি দোকান থেকে বেরিয়ে পরে । তারপর কলেজে গিয়ে সে দেখে যেখানে নোটিশ টাঙানো রয়েছে সেখানে অনেক ভিড় লেগে আছে এবং সে কলেজের ছাত্র- ছাত্রীদের মধ্যে ঘেঁষাঘেঁষি তে নোটিশটি পরে। নোটিশটি পড়ে তার মনে একটা আসা জাগ্রত হয় এবং মনে মনে ভাবে সে তিনজনের মধ্যে একজন হবে যাদের পুরস্কার দেওয়া হবে। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ যেন তাকে ব্যঙ্গ করে বলে “তুই এটার স্বপ্ন দেখিস না, তোর জন্য এই পুরস্কারটা নয়” কথাটা শুনে তার মনে একটু দুঃখ হলো তবুও সে কারো কথায় কোন কান না দিয়ে নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখল ।

৩ নং রুমে ইংরেজি অনার্স এর অপর্না ম্যামের ক্লাস হচ্ছে। ক্লাসে ম্যামও নোটিশটির ব্যাপারে আলোচনা করল। ক্লাসে বসে তানিয়া ভাবছে সে কী বিষয়ে গল্প লিখবে এবং সে একটু অন্যমনস্ক হয়ে পরে। কিছুক্ষণ পরে ম্যামের আওয়াজে তার অন্যমনস্কতা ভাঙলো। “ কী হয়েছে, এত অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছো কেন? ”তানিয়া তখন ঘাবড়ে গিয়ে বলল গল্প লেখার ব্যাপারে ভাবছিলাম । এ কথাটি শুনে পাশে ছাত্রছাত্রীরা তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করতে শুরু করলো । তারপর ম্যামের বকুনিতে সবাই চুপ করল এবং বলল— "গল্প লিখবে ঠিক আছে কিন্তু এত অন্যমনস্ক হয়ে পড়লে হবে না। তুমি একটু বেশিই ভাবো, ঠিক আছে বসে পর।"

ক্লাস শেষ হবার ঘন্টা পড়ল এবং ম্যাম ক্লাস থেকে বেরিয়ে পড়ল আর সে তখনও ভাবছে সে কী লিখবে । আজ পর্যন্ত সে বিভিন্ন রকম গল্প লিখে এসেছে এবং সেগুলির মধ্যে বেশিরভাগই প্রেমের কাহিনী তবে এখন সে আলাদা ধরনের লিখতে চায়।


কলেজ ছুটি হল এবং তাকে তার বান্ধবী পিছন থেকে ডাকছে । তার নাম জিনিয়া কিন্তু সে বাংলা অনার্স নিয়ে পড়ে । ছুটতে ছুটতে এসে বলল “ কলেজের পাশে একটি বই মেলা বসেছে চল গিয়ে দেখে আসি ”। তারা দুজনে বই মেলায় গেল । মেলা ঢোকার প্রবেশ দরজায় লেখা আছে ‘ সাগরদিঘী বইমেলা ’ । আর সেই মেলায় বিভিন্ন রকমের বইয়ের দোকান আছে এবং একটা দোকানে এক এক রকমের বই আছে। কোনোটা ভূতের গল্পের বই আবার কোনোটা হাসির গল্প , প্রেমের গল্প ইত্যাদি। তানিয়া একটি বই কিনল। সেটিতে প্রেমের কাহিনী লেখা আছে কারণ সে প্রেমের গল্প পড়তে খুব পছন্দ করে। আর জিনিয়া একটি ভূতের গল্পের বই কিনল কারণ সে বাড়ীতে বেশীরভাগ সময় ভূতের সিনেমা দেখে । তারপর তারা দুজনে ফুচকার দোকানে গিয়ে ফুচকা খেল। তখন জিনিয়ার মোবাইলে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এলো এবং সেই ফোনটি কেটে দিয়ে মোবাইলটি সুইচ অফ করে দিল। তার মোবাইলে প্রায় অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে এবং তাকে বিরক্ত করে। কিন্তু  তাদের কাউকে পাত্তা দেয় না কারণ সে আগে থেকেই রিলেশনশিপে আছে । অন্যদিকে তানিয়াকে অনেকজনই প্রপোজ করেছে কিন্তু তাদের কাউকেই সে পাত্তা দেয়নি কারণ এসবের জন্য তার সময় নেই । আর তার এই ভাঙ্গা মোবাইলে কেই বা ফোন করবে । কারণ সে এতটাই গরীব যে মোবাইল ঠিক করার জন্য তা কাছে টাকা নেই । তাই তার মোবাইল শুধু বারে বারে সুইচঅফ হয়ে যায়।

মেলা দেখার পর তারা দুজনে বাড়ি চলে যায়। জিনিয়া আর তানিয়ার বাড়ি একই দিকে নয় তাই তারা বিপরীত দিকে চলে যায়। বাড়ি আসার পথে তানিয়া মনে মনে ভাবে সে কত গরিব ,তাকে শুধু টাকার জন্য কাজ খুঁজে বেড়াতে হয় আবার তাকে পড়াশোনাও করতে হয় । তার জীবন শুধু দুঃখে পরিপূর্ণ।

তারপর সে বাড়ি আসার পরে অন্যমনস্ক হয়ে কিছু কথা না বলে সোজা ঘরে ঢুকে যায়। মা দেখে আশ্চর্য হয় এবং তাকে খাওয়ার জন্য ডাকে। সে হাত মুখ ধোয়ার পর খেতে বসে । তার মা বলেন “ কী হয়েছে ,কি ব্যাপার চুপচাপ আছিস কেন ? অন্যদিন তো খুব বকিস ”। সে মাকে নোটিশটির  ব্যাপারে সব কথা বলল। শোনার পর মা তাকে বললো “ তোকে কারো কথায় কোন কান দিতে হবে না তুই শুধু নিজের উপরে বিশ্বাস রাখ ,আমি জানি তুই পারবি ”। তখনই মনে মনে ঠিক করে ফেলল সে কি গল্প লিখবে এবং সে তারই জীবন কাহিনী নিয়ে একটা গল্প লিখল।

আজ রবিবার ,কলেজ ছুটি। তাই সে দুপুরবেলায় ঘরে বসে তার লেখা গল্পটি বারে বারে পড়ছে এবং মাঝে মাঝে একটু লজ্জা বোধ করছে। সে ভাবছে তার গল্পটা শুনে কেউ আবার হাসবে না তো! যদি এ ব্যাপারটা অতটা গুরুত্বপূর্ণ না হলেও গল্পের শিরোনাম দেওয়াটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সে এখনও ঠিক করতে পারেনি যে গল্পটির কী শিরোনাম দেবে। এবং সে এটা নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়ে গেছে।

যাইহোক ,গল্পের শিরোনাম নিয়ে যে সমস্যাটি ছিল সেটি দূর হয়ে গিয়েছে কারণ সে ঠিক করে ফেলেছে কী শিরোনাম দেবে। তারপর সে সেটি কলেজে জমা দিয়েছে।

আর কয়েকদিন পর সেই তিনজনের নাম ঘোষণা করবে যাদের লেখা সবথেকে সুন্দর হয়েছে। দিন গোনা শেষ হলো এবং তিনজনের নাম ঘোষণা করা হলো। সেই তিনজনের মধ্যে তার নামও ছিল।

এইসব শুনে তার তো খুশির সীমা নেই। তার সারা বাড়িতে শোরগোল পড়ে যায়। যে পত্রিকায় গল্পটি প্রকাশিত হয়েছিল সেটি বাড়ির সবার হাতে হাতে ঘোরে এবং একবার করে বলে ,বাঃ চমৎকার লিখেছে তো !
পত্রিকার সুচিপত্রে নামও ছিল। ছোটবেলা ( গল্প )তানিয়া সুলতানা।

আর তানিয়া এবং বাকি দু'জনকে কলেজ কর্তৃক পুরস্কার দেওয়া হল তাদের মধ্যে একজনের নাম ছিল রহিম মণ্ডল এবং আরেকজন সৌমিত্র চক্রবর্তী।

                         সামিমা ইয়াসমিন 

কবিতা --আয় কমলা আয় বিমলা শ্রীকান্ত মাহাত

কবিতা --

আয় কমলা আয় বিমলা
       শ্রীকান্ত মাহাত 


আয় কমলা আয় বিমলা
    নদীতে স্নান করি।
নদীর জলে অবগাহন
   আমরা জলপরী।
দুই পাড়েতে বন বিথীকা
    মাঝে বালুর চর।
বালুর চরে খেলবো মোরা
       বেলা দুই প্রহর।
খিদে লাগলে খাবো আমরা
      গাছের পাকা ফল।
বাড়িতে আছে দাদু দিদিমা
      আশায় আছে বল।
গামছা দিয়ে মাছ ধরবো
   সাঁঝে হবেক ঝোল।
খাবার খেয়ে শুয়ে পড়বো
     বোল  হরি বোল।

গল্প --অবশেষে সে আমার প্রেমিকা--শাবলু শাহাবউদ্দিন


গল্প --

অবশেষে সে আমার প্রেমিকা--
শাবলু শাহাবউদ্দিন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শেষ করে চড়ে বসলাম কুষ্টিয়া-ঝিনাইদাহগামী একটা বাসে। আমার সাথে আমার বন্ধু শুফম আছে। সে নিয়মিত বাসের জানালার পাশে বসে। তাই বাধ্য হয়ে বাসের ভিতরের সিটে বসতে হল আমার। দু'জনের-ই মন খারাপ। এত টাকা খরচ করে কোচিং করলাম, অথচ পরীক্ষায় ভালো করতে পাড়লাম না। আমি নিশ্চিত আমরা চান্স পাচ্ছি না। 
বাসের মধ্যেই আমার বন্ধু আবার বই নিয়ে পড়তে বসলো। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে, যে করেই হোক চান্স পেতে হবে। আমিও বই নিয়ে পড়তে বসলাম। কী পড়বো! সব তো মুখস্থ। কিন্তু কনফিউশনের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ভালো করতে পারি নি। বই রেখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলাম। পড়তে মন বসছে না। হঠাৎ আমার পাশে অপজিট সিটে বসা মেয়েটির চোখ চোখ পরে গেলো আমার। সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে সামনের দিকে তাকালাম আমি। কিন্তু অন্য দিকে কিছু সময় পরে আমার মন আমাকে বলছে, মুতালেব আবার তাকা। আমি আবার তাকালাম। আবার মেয়েটির চোখ চোখ পরে গেলো। আমি আবারো চোখ ফিরিয়ে নিলাম। নিজে নিজেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। বুকের মধ্যে দরফর দরফর করতে লাগলো। হাটবিট বেড়ে গেলো। আমি ভয়ে ভয়ে আবার তাকালাম। দেখি মেয়েটি অন্য দিকে চেয়ে আছে। আমার দিকে সে অনেক সময় পর একবার তাকালো। এবার মেয়েটি নিজেই মুখ ফিরিয়ে নিল। আমি ওর দিয়ে একপলকে চেয়ে আছি। চোখ অন্য কোন দিকে ঘুরিয়ে নিচ্ছি না। মেয়েটি মাঝে মাঝেই আমার দিকে তাকাচ্ছে এবং চক্ষুলজ্জায় সে বার বার মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু আমাকে হতাশ করছে না। আমাদের বাস যখন ঈশ্বরদীর পাকশী লালন শাহ ব্রিজের উপর তখন মেয়েটি আমার দিকে অনেক সময় ধরে চেয়ে আছে। সবাই চেয়ে আছে পদ্মার দিকে, হাডিং ব্রিজের দিকে। শুধু আমি চেয়ে আছি ঐ মেয়েটির দিকে আর মেয়েটি চেয়ে আছে আমার দিকে। হঠাৎ ওর ডানে বসে থাকা বৃদ্ধ মানুষটি কেমনে যেন বুঝে গেলো আমাদের মধ্যে কিছু একটা চলছে। বৃদ্ধ মানুষটি সিট পরিবর্তন করলো। বৃদ্ধ মেয়েটিকে উঠিয়ে জানালার দিকে বসিয়ে দিয়ে, সে মেয়েটির সিটে বসে আমার দিয়ে চেয়ে রইলো। আমি যখনই ঐ দিকে তাকাই তখনই দেখি বৃদ্ধ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এ কী মুশকিলে পড়ে গেলাম।  অবশেষে বাধ্য হয়ে  আমি আমার বন্ধু শুফমকে বললাম, "দেখতো বন্ধু, বৃদ্ধ আমার দিকে তাকিয়ে আছে কী না।" বন্ধু  বললো, হমম। আমি যতবার বললাম বন্ধু ততবার বললো, হমম চেয়ে আছে তোর দিকে। আমি আর ভয়ে তাকালাম না। 
বাসের হেল্পার ডাকতে লাগলো ভার্সিটি গেট। ভার্সিটি গেট, আপনারা নামেন।
নামার সময় কেবলি একবার মেয়েটির দিকে তাকিয়েছি। ওমনি বৃদ্ধ মানুষটি আমার দিকে তেড়ে এলো। আর বললো, "এ দিকে কী। হুম, এ দিকে কী। আবার তাকালে চোখ উপরে নিব।"
চক্ষুলজ্জায়, আমার প্রাণ যেন যায় যায় অবস্থা। ভার্সিটির গেট থেকে সরে যেন সময় পাই নি আমি। দুই বন্ধু দৌড়াতে দৌড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝখানে চলে গেলাম। বন্ধু শুফম, আমাকে রাগাইতে লাগলো, "এ দিকে কী। হুম এ দিকে কী।" বলে।
২.
পরের দিন পরীক্ষার হলে বসে আছি। আমার ডানে একটা সিট ফাঁকা আছে। পরীক্ষা আর মাত্র মিনিট দশেক দেরি আছে। আমাদের উত্তর পত্র দিয়ে দিছে। ঠিক ভাবে নাম রোল পূরণ করার জন্য। আমার অন্য কোন দিকে মন নেই। মনযোগ দিয়ে পূরণ করছি। হঠাৎ একটি মেয়ের কণ্ঠ পেলাম। একটু যেতে দিবেন ভাই, ঐ সিট টি আমার। আমি মেয়েটির দিকে না তাকিয়ে পথ ক্লিয়ার করে দিলাম। মেয়েটি সিটে গিয়ে বসলো। কিন্তু আমি ততটা ভ্রুক্ষেপ করলাম না। আপন মনে বৃত্ত ভরাট করছি। টাইম হয়ে গেছে। প্রশ্নও পেলাম। প্রশ্ন পড়ে পড়ে আবারো বৃত্ত ভরাট করছি। এক ঘন্টা টাইম। আশিটা বৃত্ত। পঞ্চান্নটি দাগিয়েছি। আর পারছি না। দাগালেই ভুল হবে। সময়ও আছে আরো তের মিনিট। বাম দিকের ছেলেকে দুইটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলাম। ও বললো পাড়ি না। আমাকেও ঐ ছেলে পরে দুইটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলো। আমিও রাগে রাগে বললাম পারি না। আর মিনিট দশেক সময় আছে। অবশেষে আমার ডানে বসা মেয়েটির দিকে তাকালাম। ও মা এ কী! তুমি? বাসের সেই মেয়ে আমার ডানে বসে আছে অথচ আমি ওর দিকে এবারও তাকাই নাই। না তাকিয়ে ভালোই হয়েছে। পরীক্ষা ভালো করেছি। ওর দিকে তাকালে আল্লাহ্ জানে কী হত!
মেয়েটি খুব করুন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। আমি বুঝতে পারলাম। ওর প্রশ্ন কমন পড়ে নাই। বললাম, তোমার প্রশ্ন এবং  উত্তর পত্র আমাকে দেও। আর আমার টা তুমি নেও।
মেয়েটি বললো, "যদি ধরা পরি?"
রাখো তোমার ধরা পড়া। আমি ওর টা নিয়ে, খুব দ্রুত উত্তর পত্রের বৃত্ত ভরাট করতে লেগে গেলাম। আমার মনে হল দশ মিনিটে কম করে হলেও প্রায় ত্রিশটি বৃত্ত ভরাট করে দিলাম।
উত্তরপত্র জমা দিয়ে ও মন খারাপ করে চলে যাচ্ছিল। আমি ওর পিছু পিছু এলাম। কথা বললাম। কথায় কথায় জানতে পারলাম ঐ বৃদ্ধ নাকি ওর বাবা। ওর রোল নাম্বার নিলাম। ওর মোবাইল নাম্বার চাইলাম। ও দিলো। তারপরে যখন আমি ওর Facebook ID চাইবো তখন সামনে তাকিয়ে দেখি ঐ বৃদ্ধ হরকাবানের মত আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। কিসের FB ID. আমি পালিয়ে সময় পাই। চোখের পলকে পালিয়ে গেলাম। 
অবশেষে দশ দিন পরে রেজাল্ট পাবলিশ হল। প্রথমে আমি ওর রোল ধরে রেজাল্ট দেখতে লাগলাম। ও দেখি দশম হয়েছে। আমি ওর রেজাল্ট দেখে উকে কল দিলাম। নাম্বার টা ভুল দেখাচ্ছে। তার মানে আমি দশটা নাম্বার তুলে ছিলাম। একটা ডিজিট কম আছে।
মন খারাপ করে নিজের রেজাল্ট দেখলাম। আমি একশত সাত নাম্বারে আছি।
৩.
পরের সপ্তাহে, ভাইভা। আমি ভাইভা দিতে গিয়ে নোটিশ বোর্ডে সন্ধান নিলাম। দেখি ওর ভাইভা যেখানে তার আগের রুমে আমার ভাইভা বোর্ড। আমি সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে ওর সন্ধান করছি।ওদের কেবল তিন নাম্বার পর্যন্ত ডেকেছে। কিন্তু ও সিরিয়ালে দাঁড়ায় নাই। আমার কেমন যেন লাগছিল। মনে মনে ভাবছিলাম। ও যদি ভাইভা দিতে না আসে তাহলে আমিও এখানে ভর্তি হবো না। এলাকার কলেজেই অনার্স করবো। আমাদের ভাইভা বোর্ডে আমার সিরিয়াল সাত। আমার ডাক এলো। আমি ভাইভা দিয়ে বের হচ্ছি আর ওদের সিরিয়ালের দিকে তাকিয়ে আছি যে, দেখি ও আসছে কী না। তবুও দেখচ্ছি ও সিরিয়ালে দাঁড়ায় নাই। ওদের সিরিয়ালে। দশম বলে কে যেন ডাকছে। সেই সময় মনে হল কে যেন পিছন থেকে ছুটে এসে আমাকে ধাক্কা মেরে দিলো। ধাক্কা লেগে ওর কাগজপাত্রের ফাইল ছুটে গেলো। পিছন ফিরে কেবলি গালি দেবো। ওমনি দেখি, এ আর কেউ না, আমার সেই মেয়েটি। আমি তখন জোরে করে রেসপন্স করলাম। দশম আছি। এবং ওর ছুটে পড়া ফাইল উঠি দিয়ে ভাইভার রুম অবধি এগিয়ে দিলাম। ভাইভা শেষ করে ও রুম থেকে বের হল। আমাকে দেখে ও মহা খুশি। অবশেষে ওর থেকে সঠিক নাম্বার আর FB ID পেলাম।
৪.
ভাইভা শেষে, পনেরো দিন পরে আমাদের ভর্তির তারিখ নির্ধারিত হল। আমার এলো লোকপ্রশাসন। ওর এলো ইংরেজি। আমার ভীষণ মন খারাপ হল। হয় তো ও আমার সাথে সম্পর্ক রাখবে না। কারণ ওর সাবজেক্ট ভালো। কিন্তু না। ভর্তি হবার পরে দেখি, ও আমাকে ছাড়া কিছুই বোঝে না। ক্লাস টাইম আর ঘুমের টাইম বাদে সব সময় ও আর আমি একসাথে। কখনো লেকের পারে। কখনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে। কখনো রবীন্দ্রনাথ বাড়ি। কখনো লালনের মাঝারে। সব সময় একসাথে। একটি ভালো কাপল হিসেবে সবার সামনে মুখ পরিচিত হয়ে উঠলাম আমরা। ছয় মাস যেতে না যেতেই হঠাৎ একদিন, ও উধাও। এক'দিন, দু'দিন চলে যায় আমি ওর সন্ধান পাই না। ফোন, FB সব বন্ধ ওর। ঘটনা কী! অবশেষে ওর ডিপার্টমেন্টের বন্ধুদের নিকট খোঁজ নিলাম। তারাও বলতে পারে না। সাত দিন চলে যায়। আমার অবস্থা টাইট। আমি দিশাহারা।
অবশেষে আমার ডিপার্টমেন্টের সবাই জেনে গেলো, আমি ক্লাস করছি না। লেকের পারে বসে সারাদিন সিগারেট খাই। রাতে রুমেও ফিরি না। মাঝে মাঝে নেশাও করি। বিষয়টি শিক্ষকেরা অবধি জেনে গেলো। অবশেষে ২০ দিনের মাথায় শিক্ষকদের মারুফতে জানতে পারলাম, ওর বাবা মারা গেছে। তাই ও এখন নিজের এলাকাতে আছে। ও ক‍্যাম্পাসে কবে আসবে তা কেউ বলতে পারে না। ২৫ দিনের মাথায় ওর বাড়ির ঠিকানা যোগার করলাম; ওদের ডিপার্টমেন্টের অফিস সহকারী নিকট থেকে। ২৬ দিনের দিন রওনা হলাম ওদের বাড়িতে। ওদের বাড়িতে গিয়ে দেখি কেউ নেই। আমি ওদের ঘরের বারান্দায় গিয়ে বসে রইলাম। একজন দু'জন করে অনেক লোক জড় হয়ে গেলো। ওদের মুখ থেকে শুনতে পেলাম কাসেম প্রধানের পরিচিত কোন এক নাতি আমার বন‍্যাকে বিয়ে করে বিদেশ নিয়ে গেছে আজ থেকে ছয় দিন আগে। বিষয়টি আমি কোন ভাবে মেনে নিতে পারছিলাম না। বন‍্যা বিদেশ যেতে পারে না। কারণ ওর পাসপোর্ট নেই। এত তাড়াতাড়ি এত কিছু কেমনে সম্ভব। আরো জানতে পারলাম ওদের পরিবারের অন‍্যান‍্য সদস্যরা সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক আগেই মারা গেছে। আপন বলতে এই পিতা ছাড়া আর কেউ ছিল না ওর। 
পরিস্থিতি অস্বাভাবিক দেখে অবশেষে কাসেম প্রধান এসে আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন। কাসেম প্রধান এলাকার মোড়ল ও বিশাল রাজনৈতিক নেতা। পুলিশ আমাকে থানায় তুলে নিয়ে গেলো। তারপরের দিন আমার পিতা-মাতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার বিভাগের একজন শিক্ষক খবর পেয়ে থানায় এসে অজ্ঞান অবস্থায়  আমাকে উদ্ধার করেন। তারপরে কতদিন পরে আমার জ্ঞান ফিরে ছিল তা আমার জানা নেই। আমার এই অজ্ঞান অবস্থা নিয়ে বিশাল একটা কাণ্ড ঘটে যায়। থানার ওসি প্রত‍্যাহার হয় এবং কাসেম প্রধান আটক হয়ে জেলে যায়। অথচ আমাকে কেউ কিন্তু ফুলের টুকাও দিছিল না।
.
যাইহোক, আমার পড়াশোনা গ‍্যাপ পড়ে গেল। আমি আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যেতে চাই ছিলাম না। অবশেষে, বাবা-মায়ের অনুরোধে এক বছর গ‍্যাপ দিয়ে আবার প্রথম বর্ষে ক্লাস শুরু করতে বাধ্য হলাম। পড়াশোনা নামে মাত্রা চলতে থাকে। সব সময় সাহিত্যচর্চায় আমি বিভোর। কবিতা আর কবিতা। আমি কবি।
অবশেষে কোন মত করে অনার্স শেষ করলাম।বড় কবি হব বলে ঢাকায় আসলাম। এখানে এসে পড়লাম আরেক বিপদে। কে কারে চেনে। কিসের কবি। কবি এখন ঘরে ঘরে। কোন পত্রিকার অফিস আমারে নিলো না। কেউ নেওয়া তো দূরের কথা। আমাকে মূল‍্যায়ন অবধি করলো না। 
কী আর করার। দিন শেষে, একটা ফুটঅভার ব্রিজের উপর শুয়ে পরলাম। মাঝ রাতে চেতন পেয়ে দেখি আমার গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। পাশ দিয়ে কে যেন যাচ্ছিল। হাত দিয়ে তার পা চেপে ধরে বললাম, আমি বাঁচতে চাই। আমাকে বাঁচান। পা টা খুব নরম মনে হচ্ছিল। কোন এক মেয়ে মানুষের পা হয় তো হবে।
তারপরে কী ঘটেছিল তা আমি বলতে পারবো না। পরের দিন চেতন পেয়ে দেখি আমি একটা হাসপাতালের বেডের উপর শুয়ে আছি। শরীর অনেকটাই সুস্থ। আমি উঠে বসতেই কোন এক নার্স এসে আমাকে বললো, আপনি শুয়ে থাকুন। বিকেলে আপনার স্ত্রী এসে নিয়ে যাবে। 
আমার স্ত্রী? কে সে? নিজেই নিজেকে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন আমার আবার বার বার বন‍্যার কথা মনে পরে যাচ্ছিল। বন‍্যার কথা ভাবতে ভাবতে আমি আবার ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম থেকে জেগে দেখি আমার পাশে একটি মেয়ে বসে আছে। ধীরে ধীরে মেয়েটির মুখের দিকে তাকালাম। মুখের দিকে তাকিয়ে লাফিয়ে উঠলাম। কে? বন‍্যা, তুমি?
- হমমম, আমি বন‍্যা।
- এত দিন কোথায় ছিলে?
- সে অনেক কথা। পড়ে বলবো। এখন চল বাড়িতে যাই।
- আমাদের বাড়ি কোথায়?
হাসপাতাল থেকে রওনা হলাম। রিকশায় উঠে ও সব বললো। রাতে আমি নাকি ওর পা চেপে ধরে বাঁচতে চেয়ে ছিলাম।
অবশেষে আমি জানতে চাইলাম ওর বিদেশ যাওয়া নিয়ে। ও কিছুই বলতে চাচ্ছিল না। আমার জোড়াজুড়িতে অবশেষে মুখ খুললো। 
কাসেম প্রধান ও ওনার নাতি বিয়ের নাটক সাজিয়ে দোলদিয়ার পতিতলায় উকে বিক্রি করে দিছিল। সেখানে প্রায় দুই বছর ছিল। সেখান থেকে ঢাকার কোন এক হোটেল মালিক তাকে কিনে নিয়ে এসেছে। ওখানে প্রায় আড়াই বছর থাকার পরে আজ দের বছরের মত হল ও মুক্তি পেয়েছে। হোটেল মালিক রাজনৈতিক রোষানলে পড়ে জেলহাজতে আছে। ওনার সব ব‍্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আপনা আপনি মুক্তি পেয়েছে ও। এখন ও স্বাধীন ভাবে বারে (মদের ক্লাবে) কাজ করে। পাশাপাশি একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনা করছে। 
আমি সব শুনে উকে বললাম, আমাকে বিয়ে করতে পারবা?
ও আমাকে বললো, বিয়ের কী দরকার! আজীবন আমি তোমার প্রেমিকা হিসেবে থাকতে চাই। রাখবা না?
আমি কিছু না বলে ওর হাসিমাখা উজ্জ্বল মুখের দিকে ফ‍্যালফ‍্যাল করে তাকিয়ে রইলাম।

কবিতা -- কিছুক্ষণ--অঞ্জলি দে নন্দী, মম

কবিতা -- 

কিছুক্ষণ
অঞ্জলি দে নন্দী, মম

মৃতদেহটির মাথাটা মায়ের কোলে আছে।
যুবক ছেলের দেহ প্রাণহীন।
কিছুক্ষণ বসেছো কি সেই সে মায়ের কাছে?
নিয়তি তো চির ত্রাণহীন।
জীবনের জন্য কোথায় তার দয়া, মায়া?
নিষ্ঠুরতা যে তার দানে নাচে।
কাজ তার স্পন্দনহীন করা কায়া।
ছিঃ নিয়তি! তুই কি নিদারুণ বেহায়া!
বল তো ওরে ও তুই নিলাজ!
পুত্রহারা মা এখন কি করে বাঁচে?
এবার বন্ধ কর তোর সেই সে পুরোনো কুকাজ!
অকালে কাড়িস না আর প্রাণ!
নিতে দে নবপ্রাণকে দীর্ঘ জীবনের ঘ্রাণ!
শোন তুই অতি দীর্ঘ জীবনের হৃদ-আওয়াজ!
ওহে বিশ্ব, তুমি কি চেনো সেই সে অসহায় মাকে?
কিছুক্ষণ কি তুমি শান্তি দিতে পারো সেই সে মাকে?
হয়েও জীবন্ত
যে চিতা সম জ্বলন্ত।
আমি দেখি সেই সে মাকে।
আমিও ডাকি 'মা' বলে যাকে।
আমার খুব কাছের সেই সে পুত্রহারা মা, তাই।
আর সেই সে অকাল-মৃতটি - সেতো 
হ্যাঁ, সে যে আমার নিজ-ছোট-ভাই।
যে প্রতি বছর আমার আঙ্গুল থেকে
চন্দনের ভাইফোঁটা পেতো।
যার কপালে আমি দীর্ঘায়ুর চিহ্ন দিতাম এঁকে।
তবুও আজ আর সেতো
আমাদের এই জীবনের জগতে নাই।
শুধু বেদনার স্মৃতি গেল সে রেখে।
ব্যথার আঁধারে অন্তরে শুধুই খুঁজি তাকে;
যে চিরতরে ছেড়ে যায়, তাকে কি আর পাই!
তবুও আমার ভাইয়ের ব্যথাতুর মাকে
প্রাণপণ চেষ্টায় বাঁচাতে চাই।
আর সে এখনই চিরতরে চলে যেতে চায়
তার আদরের ছেলের কাছে।
হায় হায় হায়!!!
মৃত্যু তো শরীরকে শ্বাসহীন করতে নেয় 
কিছুক্ষণ মাত্র।
সত্যই মৃত্যু, তুই এক চির ঘৃণার পাত্র।


Saturday 15 October 2022

অণুগল্প -- কণ্যা--চন্দ্রাণী গুপ্ত ব্যানার্জি

অণুগল্প -- 

কণ্যা 
চন্দ্রাণী গুপ্ত ব্যানার্জি
-----------------------------

আজ সদানন্দ পাল মহাশয়ের টালির ঘরে আলো-আঁধারির খেলা। বেশিরভাগটাই আধারে নিমজ্জিত ।সেই ঘরেরই  নিভৃত কোণে একটি প্রদীপ প্রজ্বলিত । আশে-পাশে পড়ে রয়েছে মাটির ডেলা। প্রদীপের সলতে উসকে দিলেন বিপত্নীক সদানন্দবাবু ।বুকের ভেতরটা যেন হাহাকার করে উঠলো ।ঘরটা আজ বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। হৃদয় ফুড়ে কান্নার স্রোত বেরোতে চাইছে। অশ্রুসজল নেত্রে ফাঁকা ঘরটায় কাউকে  অবিরাম খুঁজে চলেছেন। কিন্তু সে যে আজ নেই ।সদানন্দবাবুর ঘর অন্ধকার করে সে আজ অন্যের  গৃহ আলোকিত করছে। বাইরে আলোর রোশনাই। পৃথিবী জুড়ে আনন্দের বান ডেকেছে। সদানন্দবাবু যে আজ আবারো একা হয়ে গেলেন। এতদিন ধরে তিলে তিলে যাকে গড়ে তুলেছিলেন মনের মতো করে তাকে আজ অপরের হাতে তুলে দিতে হলো। কন্যা মৃন্ময়ী এতদিন সদানন্দবাবুর যে ঘর আলো করে ছিল আজ সেই ঘরেই শূন্যতা বিরাজমান। ষষ্ঠীর সন্ধ্যের আকাশে এক ফালি চাঁদ উঁকি দিচ্ছে। সেই চাঁদের পানেই তাকিয়ে ছিলেন সদানন্দবাবু ।ঘরে হঠাৎ করেই কারো পদধ্বনি যেন শুনতে পেলেন। এ পদধ্বনি  তার বডড চেনা। তার আত্মজা চিন্ময়ীর। চিন্ময়ী জানে এই কটা দিন তার বাবা মনের দুঃখ কষ্ট পাথর চাপা দিয়ে রাখেন । মৃন্ময়ীকে বাবা নিজের কন্যা জ্ঞানে দেখেন। তাই আজ সদানন্দবাবু মৃন্ময়ীর চলে যাওয়ায় ভগ্নহৃদয়। চিন্ময়ী এসে আস্তে করে ডাকে...

 ---"বাবা ..."

সদানন্দ বাবু ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়ের দিকে তাকান। চিন্ময়ী দেখে তার বাবার চোখে জল। শরৎকালে শ্রাবণের বারিধারা বইছে। এ মানুষটি যে কখনো তার দুই কণ্যার মধ্যে ভেদাভেদ করেননি। দুজনকেই ভরিয়ে দিয়েছেন সমান ভালোবাসায় ।সে দেবী হোক কিংবা মানবী।


Wednesday 12 October 2022

জয়িতা ভট্টাচার্যর গল্প ও কবিতা --

জয়িতা ভট্টাচার্যর গল্প ও কবিতা --

গল্প --
মায়াবউ

ঠক্ ঠক্ ঠক্ ঠক্......
 আওয়াজটা এগিয়ে আসছে।
মায়া পেছন ফিরে বাসন মাজছে কুয়োতলায়।আওয়াজটা তার চেনা।খর রোদ্দুর।বেশি বেলা হয়নি,মোটে এগারোটা, তবু গলা থেকে বুকের ভাঁজ বরাবর ঘাম গড়িয়ে পড়ছে।রংচটা ব্লাউজের ওপরের বোতাম কবে ছিঁড়ে গেছে।ভারি বুক ভিজে গেছে, কোমরে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
সুনীল এসব দেখে। উঠোনে বসে হাঁফায়।রেশনের চাল তেল সাবান বিস্কুট। চকখড়ির বৃত্তে দান উৎসব।
কাল থেকে ত্রিবর্ণ সঙ্ঘ এক প্যাকেট দুধ দিয়ে যাচ্ছে।মায়া র জন্য।
উঠে দাঁড়াতে কষ্ট।ভারি পেট মায়া তবু ওঠে।আধমাজা বাসন রোদে পোড়ে।
বুকের কাপড়, কোমরের কষি আলগা, মায়া জল বাতাসা নিয়ে আসে।নিজেও গলায় ঢালে ঘটি থেকে অনেকটা জল।বড়ো চেষ্টা।ভাসুর ভাদ্দর বউ তফাতের দিন কবেই মুছে গেছে, যেমন সুনীলের মনেই পড়ে না স্পষ্ট করে এমন একটা খর দিনের কথা।ট্রাকের চাকায় পিষে দিয়েছিল  ডান পা টা।একমাস হাসপাতালে থেকে অনেক দিন পর এক পায়ে কাঠের দণ্ডে ভর করে  দুর্বল কোমরে ঘরে এসেছিল সুনীল।
সেই পা টার কথা মনে পড়ে। ওখানটা বিলকুল ফাঁকা।ইচ্ছে করে সেই হারানো পা টা একবার হাত বোলাতে।টুকরো টুকরো হয়ে পথে পড়ে থাকা তার পা
গরম চাতালে জল ঢালে মায়া,
পেটেরটা আটমাস।বুঁচি , তার বড় মেয়েটা রান্না ঘরের সামনে চাল ধুচ্ছে।ছড় ছড় জল পড়ে নেবুগাছে।নেবু চুষতে ভালো লাগে আজকাল মায়ার।
মানুষটার ওপর রাগ হয়।দুবছর হলো এই গ্রামের পঁচিশটো  লোক মিলে কোথায় যেন রাজমিস্ত্রির কাজ নিয়ে চলে গেল, অনেক দূরে কী জানি কোথায়। 
দিল্লি থেকে নাকি আরো সাত ঘন্টা।
গেলোবার এসে রাতে এমন দস্যিপনা করল সারারাত.......মায়ার নাকের ডগায়  ঘাম।--"কী দরকার আর,এট্টা মেয়ে আছে তো।" তা শুনলে তো!।যেকদিন ছিলো তার হাড় মাস এক করে যাবার দিন,গালটা টিপে  বলে গেল এসে ছেলের মুখ দেখব।
"দূর হ ",
আলতো হেসে কাকে যে বলল মায়া, ওই পা পা করে ঘুরে বেড়ানো এক শালিখটাকে না রাতের স্মৃতি,নাকি মানুষটাকেই।
বাবলা গাছের একটু ছায়ায় কটা কাঠবিড়াল খুনসুটি করছে।শুনশান পথঘাট।
তা মানুষটা পারে বটে পরিশ্রম করতে।ছায়া দেখে অল্প উদাস হয়।কেমন আছে কে জানে।হদ্দ পাঁচ দিন ফুন নেই।যাবার আগে দাওয়ায় নতুন করে খড় ছাইলো একা হাতে।
তার জন্য  কাচের চুড়ি,নতুন শাঁখা পলা এক জোড়,পাউডার,ভাস্করের হাতে কিচু টাকাও তো দে গ্যাচে।কত্তব্য কম্ম জানে খুব। 
সুনীল ঘেমো ফতুয়াটা খুলে রাখে।
অনিলের কোনো খবর নেই।তবে একসঙ্গে আছে সবাই।একা তো নয়।
দেশে নাকি মারি লেগেছে।
সে দেশেও।কাল ক্লাবের ছেলেরা বলেছে সব দেশে সব কিচু বন্ধ।গাড়ি ঘোড়া কাজ কারবার সব।লকডাডাউন বলে তাকে।
তালি,অনিলরা ফিরবে কী করে।নাকি সেখেনে থাকবে।
দুপুর বাড়ে।খিদে পায়।ঘরের সামনে মাচা করে পুঁই, লাউ ডগা চরবড়িয়ে বাড়ছে ডগমগে যুবতী র মতো।
লঙ্কা, কটা ঝিঙে আর কুমড়োর গাছ।ওরা সুনীলের পরিবার।চালে ডালে রোজ দুটো একটা গাছের সবজি তো জুটছে।
মনটা খচ্ খচ্ করে।বৌটা পোয়াতি, হাতে বেশি টাকা নেই।অনিলের খবর পাওয়া যায় না।
পুকুর ঘাটে আধজলে মায়া। রোদ উঠেছে টকটকে।ব্লাউজ খুলে দেয়, জলে আরেক ধাপ নেমে গায়ের কাপড়,সায়া।নগ্ন পেটের ওপর ঠাণ্ডা জল ,মানুষটা কবে ফিরবে কে জানে।
একডুব,দুই ডুব তিন ডুব,মনে মনে বলে ঠাকুর গো,মানুষটার মান রেখো একটা ছেলে দিও।
ক্ষিদে পাচ্ছে সুনীলের।ভিজে চুল থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে, খালি গায়ে ভিজে কাপড়,স্পষ্ট করে সব সাজানো।সুনীল অন্ধ হয়ে থাকে।
একটু গড়িয়ে নিতেই সন্ধ্যা এসে যায়। 
অন্ধকারে প্রদীপ জ্বেলে শাঁখ বাজায় মায়া।কাচা কাপড়।মোটা করে সিঁদুর।গায়ে, গলায়, বগলে পাউডার।ধূপ আর পাউডারের গন্ধ মিশে যায়।
চা দোকানের পাশের ঘরে টিভি।কত পুলিশ। সব বন্ধ। গাড়ি ট্রেন সব।ওই যে পথে লাইন করে ওরা কারা।মাথায় বস্তা নিয়ে হাঁটছে দলে দলে ওরা।সুনীল পাছা ঘষটে এগিয়ে যায়। প্রাণপন খোঁজে। ওখানেই আছে অনিল।হ্যাঁ,ওরা নাকি হেঁটে হেঁটে ফিরছে যে যার বাড়ি।কাজ গেছে।খাওয়া থাকার জায়গা নেই।কত লোক ,মেয়ে মদ্দ শিশু সব লাইন করে।
পুলিশ লাঠিপেটা করছে।তুলে দিচ্ছে ট্রাকে,কেউ উঠতে পারছে কেউ পড়ে যাচ্ছে।রেল লাইন ধরেও কত লোক।
ওখানেই অনিল আছে কোথাও।পাড়ায় সবাই দোর দিয়েছে।কেউ নেই ।

মায়ার হয়েছে জ্বালা।একঠেঙে মানুষ টা কোথায় পড়ে মরবে,এখনো এলো না,বাইরে ঘুটঘুটে।
--"বলি এত রাত করে যে ফিরলে পড়ে মরলে তোমার ভাইকে কী জবাব দেব।"
টিকটিক করে ডেকে ওঠে টিকটিকিটা।
বুঁচি পুরোনো পড়া করে।ইস্কুল বন্ধ। 
জ্যাঠার কাছে পড়ে অল্প বিস্তর।
রাত বাড়ে।বাইরে বিরাট কালো ছায়ার মতো রাত।ঝোপে ব্যাঙ ডাকছে।ওধারে পগাড় থেকে একটা গন্ধ। কিছু মরেছে বোধহয়। বাতাসে বোঁটকা গন্ধ।
দুজনে মুখোমুখি খায় চুপচাপ।
বলি বলি করে বলেই ফেলে মায়া,
---'' লকডাডাউন কারে বলে দাবাবু,আজ বৈকালে মনসার মা এসেছিল।বলে গেল এখন সরকার লকডাডাউন করেচে সব বন্ধ।তোর মরদ আসবেনি আর একন"
--অনেকটা সময় ধরে ডাঁটা চিবোয়  মাথা নীচু করে সুনীল।নিজেকে গুছিয়ে নেয়।গলা ঝাড়ে।একটু কাশে।পেঁচা ডাকে কর্কশ।
___হুম।একটু চিন্তা হচ্ছে মায়াবউ।লকডাডাউন মানে কেউ পথে বরোবেনা।কল কারখানা, দোকান সব বন্ধ।
---মানুষটা?
---সব ফিরছে।
---ওহ্। মায়া খুশি হয়ে যায়।ফিরছে তার মানুষটা।
সুনীল আর কিছু বলে না।
রাত বাড়ে।তোলা জলে বাসন ধুয়ে,আলো নিবিয়ে দেয়।
মেঝেতে পাটি বিছিয়ে শুয়ে খোঁড়া মানুষটা।মশার ধূপ জ্বালে।
বুঁচি র পাশে তক্তপোশে শুয়ে পড়ে।পেটে হাত বোলায়।অন্ধকারে পেট টা উন্মুক্ত, উঁচু হয়ে উঠেছে।নড়ছে।ওই তো এধার ওধার।এই এক স্বর্গীয় আনন্দ।
ফিরছে বুঁচি র বাপ তবে চিন্তা নেই আর।
ঘুমিয়ে পড়ে মায়া।
সুনীলের ঘুম আসে না।বিপদের গন্ধ।কিছু যেন হবে।পৃথিবীটা,তার ক্ষুদ্র পৃথিবীতে আবার কী যেন হবে।আশংকায় ঘুম আসে না।
দিনের পর দিন এধার ওধার থেকে লোক মরে শহরে।তাদের মফস্বলের বাজারেও নাকি।
খবরে বলে না অনিলের কথা।ঠক্ ঠক্ ঠক্ ঠক্.......বিরামহীন সুনীল 
সারাদিন বিডিও অফিস,পঞ্চায়েত অফিসে বসে থাকে।
কত রকম খবর ওড়ে গরম হাওয়ার সাথে,কত শুকনো পাতা ঝরে।
কত লোক নাকি গাড়ির নীচে চাপা পড়েছে।
বুকটা ধরাক করে ওঠে।না, ওরা বেহারের।ফের চাপা পড়ে কয়জনা ট্রেনের তলায়।কজন বাঙালিও।
   মায়ার আজকাল আলস লাগে।শুতে ইচ্ছে করে।আটমাস হয়ে গেল।ঘুম পায়,ক্ষিদে লাগে খুব।ঘরে খাবার বাড়ন্ত। বিনি পয়সার মোটা চাল আর মটর ডাল,সঙ্গে  উঠোনের লঙ্কা আর ঝিঙে।তাই খায় গোগ্রাসে। 
কী যেন হয়েছে ভাসুরটার।কথা কয় না।চুপ করে বসে থাকে আকাশ পানে চেয়ে।
খুব ঝড় ওঠে সেদিন  রাতে।ঘরে চুপ করে বসে দুটি প্রাণী।উঠোনে মর্ মর্ করে গাছটা উল্টে পড়ল।ঘর সাদা হয়ে কাছেই বাজ পড়ল।
একঠেঙে সুনীলকেই জড়িয়ে ধরে মায়াবউ,বুকের মধ্যে ধরফর।
আর তারপরেই পেট চাড়িয়ে ওঠে তীব্র  বেদনা।দালানের ওপর ছাওয়া চালটা উড়ে গেছে ততক্ষণে।
সুনীলের একটা ঠ্যাং সচল হয়।মায়া গোঙায়।আঝোর বৃষ্টি বাইরে,নিকষ অন্ধকার।সুনীল বাইরে আসে।
----হা ভগবান, একি করলে দয়াময়,
---"একা যেওনি  পড়ে যাবে ঘর থেকে" তবু ক্ষীণ কন্ঠ মায়ার।
রাত হলে সকাল তো হবেই। উঠোনে পড়ে আছে পেয়ারা গাছটা,সারি সারি মরা কাক,শালিখ,চড়ুই,
ভাঙা বাসা।
সে রাতে সুনীলের সঙ্গে  এসেছিল মালা আর আরতি ।যমে মানুষে টানাটানি, মায়াবউ একবার ককিয়ে ওঠে।তারপর সব চুপ।
রাতভর বাইরে বসে কাঁদে সুনীল।

ব্লক অফিসে ডেকেছিল বারো দিন আগে।পরিযায়ী শ্রমিক যারা মারা গেছে ট্রেনের তলায় তাদের ছবি।একের পর এক ছবি।আর তারপর তের নম্বর ছবিটায় অদ্ভুত থেঁতলে যাওয়া শরীরে লাইনে নিথর অনিল।অনিল ঘড়াই। ঠিকাদারের সঙ্গে কাজে যাওয়া অনিল মিস্ত্রির নতুন উপাধি পরিযায়ী শ্রমিক।
সই সাবুদ। ক্ষতিপূরণের  টাকার জন্য মায়া ঘড়াই এর নাম লিখেছিল।কিন্তু  তার হারানো পা টার মতো কথা হারিয়ে গেছিল।পাথরের মতো।
সুনীল  আজও বলতে পারেনি।

ভোরবেলা জন্মেছে হারান।
ওই নামেই ডাকে।এখন হামা দেয় সে দাওয়া আলো করে।
মায়া সিঁদুর পরে।লাল টিপ।হারানের বাপ কাজ করে আনবে অনেক টাকা।ঘর পাকা হয়েছে তার পাঠানো টাকায়।সুনীল বলেছে।সেও তো কথা রেখেছে।

কেবল দুপুর বেলা পুকুর ঘাটে ফর্সা গাছের ডালে একটা কুবোপাখি টেড়িয়ে  টেড়িয়ে দেখে,কী বলতে চায় যেন।
সারি সারি তালগাছ  ছায়া ফেলে কালো জলে।হাওয়া দেয়।ঢেউ খেলে জলে।
মায়াবউ  উদাস হয়ে যায়। বুকের আঁচল খসে যায়। মানুষটা সেই যে গেল আর তো এলোনি?
                        ________

কবিতা --

শরণাগত 

ভরে দিচ্ছ শরীরময় চাঁদ 
আর প্লাবন
  ওগো লীলাময়!
 
এতো সব কানামাছি খেলা
এতো হাহাকার
এতো যে রক্তের দেয়া-নেয়া
শূন্য দুগ্ধপথে ক্ষত বিক্ষত 
একাকী,
 এই লীলাপথে 
তোমারই ছায়া দেখি
তোমারই ছায়া দেখি
ঘাসেতে নদীতে, 
নিজস্ব জঠরে,
আলো আর আঁধারে 
হে লীলাময়!

চুম্বন করিব চরণ তোমার

কবিতা -- ফিরিয়ে দাও--সৌদামিনী শম্পা

কবিতা --  ফিরিয়ে দাও সৌদামিনী শম্পা  ছেড়ে এসেছি দিনগুলো অতীতের ছায়ামাখা পথে। শান্ত শীতল দিন, ঝড়হীন, দোলাচলহীন, বড় অমলীন সে ...